হিটলার বনাম নরেন্দ্র মোদি: দুই নেতার রাজনৈতিক মিল ও ইতিহাসের শিক্ষা
Image Source: https://lokayat.org.in/ |
অ্যাডলফ হিটলার (Adolf Hitler) ছিলেন নাৎসি জার্মানির কুখ্যাত একনায়ক, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ব রাজনীতিকে রক্তাক্ত করে তুলেছিলেন এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালিয়েছিলেন। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদি আধুনিক ভারতের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, যিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন এবং বর্তমানে দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত। প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে—এই দুই নেতার মধ্যে কোনো মিল নেই, কারণ তাদের যুগ, প্রেক্ষাপট এবং ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবুও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদরা বারবার উল্লেখ করেছেন যে, দুজনের নেতৃত্বের ধরন, প্রচারণার কৌশল, জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, এবং বিরোধী ও সংখ্যালঘুদের প্রতি কঠোর অবস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
এই তুলনাটি কোনোভাবেই সম্পূর্ণ সমানতালে দাঁড় করানোর চেষ্টা নয়, বরং ইতিহাসের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান রাজনীতির কিছু দিককে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস। হিটলার যেখানে একনায়কতন্ত্র, যুদ্ধপ্রবণতা ও জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের নামে বিশ্বকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিলেন, মোদির ক্ষেত্রে দেখা যায় হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদ, রাজনৈতিক প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে দূরত্ব এবং বিরোধীদের উপর চাপ প্রয়োগের মতো বিষয়গুলো। এ কারণে অনেক গবেষক মনে করেন, একবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় রাজনীতিকে বুঝতে হলে, বিংশ শতাব্দীর নাৎসি জার্মানির অভিজ্ঞতার দিকে তাকানো জরুরি।
হিটলার ও মোদির মধ্যে মিল
-
জাতীয়তাবাদকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার
- হিটলার: আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেছেন।
- মোদি: হিন্দু জাতীয়তাবাদ বা হিন্দুত্বের রাজনীতি সামনে এনেছেন।
-
প্রচারণার (Propaganda) গুরুত্ব
- হিটলার: জোসেফ গোয়েবেলসের নেতৃত্বে বিশাল প্রচারযন্ত্র তৈরি করেছিলেন।
- মোদি: আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি চ্যানেল ও রাজনৈতিক প্রচারণাকে জোরালোভাবে কাজে লাগান।
-
শক্তিশালী নেতার ইমেজ
- হিটলার: “Führer” বা একক নেতৃত্বের প্রতীক।
- মোদি: “চৌকিদার”, “চা-ওয়ালা থেকে প্রধানমন্ত্রী” ইত্যাদি স্লোগানে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে জোর দেন।
-
সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাবের অভিযোগ
- হিটলার: ইহুদিদের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ ছড়িয়েছিলেন।
- মোদি: মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে নানান বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে পড়েছেন (যেমন গুজরাট দাঙ্গা ২০০২, NRC-CAA ইস্যু)।
-
রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন
- হিটলার: কমিউনিস্ট, সমাজতন্ত্রী ও বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিলেন।
- মোদি: বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, এনজিও, সাংবাদিকদের ওপর চাপ ও রাষ্ট্রীয় সংস্থার (ED, CBI, IT) ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
-
আবেগতাড়িত বক্তৃতার দক্ষতা
- হিটলার: জার্মান জনগণকে আবেগী ভাষণে উন্মত্ত করে তুলতেন।
- মোদি: নাটকীয় ভঙ্গিতে আবেগী বক্তৃতা দেন, যা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে।
-
অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন
- হিটলার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানির অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
- মোদি: “আচ্ছে দিন” (ভাল দিনের প্রতিশ্রুতি) ও উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসেন।
-
অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা
- হিটলার: বলেছিলেন জার্মানি আবার প্রাচীন সামরিক শক্তি ও আর্য সভ্যতার মহিমা ফিরে পাবে।
- মোদি: “প্রাচীন ভারত” বা “সোনার ভারতবর্ষ” পুনর্গঠনের কথা বারবার বলেন।
-
একক নেতার পূজা (Cult of Personality)
- হিটলার: তাঁর ছবি, মূর্তি, প্রতীক (Swastika) সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
- মোদি: তাঁর ছবি, স্লোগান, মনিকেন্দ্রিক প্রচারণা (যেমন মোদির নামেই ভোট চাওয়া) একই ধরণের প্রবণতা।
-
মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব
- হিটলার: স্বাধীন সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত প্রচার চালান।
- মোদি: ভারতীয় মিডিয়ার বড় অংশকে “গোদি মিডিয়া” বলা হয়, কারণ সরকারপন্থী সংবাদই বেশি প্রচার হয়।
- বাহ্যিক শত্রু তৈরি করে অভ্যন্তরীণ ঐক্য সৃষ্টি
- হিটলার: ইহুদিদের পাশাপাশি কমিউনিস্ট ও বিদেশিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ান।
- মোদি: পাকিস্তান, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” ও মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে জাতীয়তাবাদী ঐক্য গড়ে তোলেন।
- ধর্ম ও সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করা
- হিটলার: খ্রিস্টান চার্চকে ব্যবহার করে জার্মান জাতীয়তাবাদ জোরদার করেন।
- মোদি: হিন্দু মন্দির, আচার, উৎসবকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করেন (যেমন অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন)।
- প্রতীকী নাটকীয়তা
- হিটলার: সমাবেশে নাটকীয় আলো, সঙ্গীত, পতাকা ব্যবহার করতেন।
- মোদি: জনসভায় নাটকীয় ভাষণ, পোশাক পরিবর্তন, বড়ো ইভেন্টে বিশেষ নাটকীয় উপস্থাপনা করেন (যেমন “মন কি বাত” অনুষ্ঠান)।
- বিরোধীদের ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘অজাতীয়’ বলা
- হিটলার: তাঁর বিরোধীদের “জার্মান জাতির শত্রু” বলতেন।
- মোদি: সমালোচকদের অনেক সময় “দেশদ্রোহী”, “আর্বান নকশাল”, “টুকরে টুকরে গ্যাং” বলে অভিহিত করা হয়।
- বড় জনসমাবেশে শক্তি প্রদর্শন
- হিটলার: ন্যুরেমবার্গ সমাবেশ ছিল নাৎসি শক্তির প্রদর্শনী।
- মোদি: বিশাল জনসভা, বিদেশ সফরে প্রবাসী ভারতীয়দের ভিড় – সবকিছুতেই সংখ্যার জোরে ক্ষমতার প্রদর্শন।
- ইতিহাসের বিকৃতি ও পুনর্লিখন
- হিটলার: আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে ইতিহাসকে বিকৃত করেছিলেন।
- মোদি: ভারতের ইতিহাসে মুঘল বা মুসলিম শাসকদের ভূমিকা ছোট করে দেখানোর অভিযোগ আছে, হিন্দু সভ্যতাকে কেন্দ্র করে নতুন ইতিহাস লেখার প্রবণতা দেখা যায়।
- সেনা ও নিরাপত্তাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব
- হিটলার: সেনাবাহিনী ছিল তাঁর শক্তির মূল স্তম্ভ।
- মোদি: সেনাবাহিনী ও “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক” প্রচার করে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলেন।
- জনগণকে ভয় ও ঘৃণার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ
- হিটলার: ইহুদিদের বিরুদ্ধে ভয় তৈরি করে বলতেন – “তারা জার্মানির ধ্বংসের কারণ।”
- মোদি: “পাকিস্তানপন্থী”, “অনুপ্রবেশকারী” বা “জিহাদি” বলে ভয় দেখানো হয়।
- অর্থনৈতিক সমস্যাকে আড়াল করা
- হিটলার: বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি ঢাকতে যুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী ইস্যু সামনে আনেন।
- মোদি: বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, নোটবন্দি বা অর্থনৈতিক মন্দার আলোচনাকে ঢাকতে জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় ইস্যু তুলে ধরেন।
- সংসদীয় গণতন্ত্রকে দুর্বল করা
- হিটলার: রাইখস্ট্যাগে (সংসদে) বিরোধীদের ধ্বংস করে একনায়ক হন।
- মোদি: সংসদে বিরোধীদের কথা শোনা কম হয়, তাড়াহুড়ো করে বিল পাশ করার অভিযোগ আছে।
- গণমানুষকে ‘বহুমত নয়, একমত’ করার চেষ্টা
- হিটলার: বলতেন “এক জাতি, এক নেতা, এক শাসন।”
- মোদি: “এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত” স্লোগান, যা ভিন্নমতকে কম জায়গা দেয়।
- কারিশম্যাটিক বক্তা হিসেবে ভরসা
- দুজনই জটিল নীতি না বলে আবেগী ভাষা, সহজ শব্দ ও নাটকীয় ভঙ্গি ব্যবহার করেন, যা জনতাকে মুগ্ধ করে।
- সামাজিক বিভাজনকে গভীর করা
- হিটলার: জার্মানদের বিভাজন করে আর্য বনাম ইহুদি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছিলেন।
- মোদি: হিন্দু বনাম মুসলিম বিভাজন, মব লিঞ্চিং ইস্যুতে নীরবতা ইত্যাদি কারণে সমাজে দ্বন্দ্ব বেড়েছে।
- নিজেদের ভুল স্বীকার না করা
- হিটলার: কখনো বলেননি তাঁর সিদ্ধান্ত ভুল, এমনকি যুদ্ধের শেষ মুহূর্তেও না।
- মোদি: সমালোচকরা বলেন – নোটবন্দি, করোনা ব্যবস্থাপনা, কৃষি আইন ইত্যাদিতে ভুল স্বীকার করেননি।
- বিদেশ নীতিতে শক্তিশালী চিত্র আঁকা
- হিটলার: প্রতিবেশী দেশগুলো দখল করে দেখিয়েছিলেন জার্মানির ক্ষমতা।
- মোদি: আন্তর্জাতিক মঞ্চে (UN, G20) শক্তিশালী ভারতের ইমেজ গড়তে মনোযোগী।
- নিজেদের “উদ্ধারকর্তা” রূপে উপস্থাপন
- হিটলার: বলতেন – “আমি না থাকলে জার্মানি ধ্বংস হবে।”
- মোদি: “আমি না থাকলে দেশ পিছিয়ে যাবে”, এমন ধারণা সমর্থকদের মধ্যে তৈরি করেছেন।
- জনসংখ্যার একাংশকে বলির পাঁঠা করা
- হিটলার: ইহুদিদের সব দোষারোপ করতেন।
- মোদি: মুসলিম বা পাকিস্তানপন্থীদের অনেক সমস্যার কারণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
- মেগা ইভেন্ট ও প্রতীকী কূটনীতি
- হিটলার: বিশাল কুচকাওয়াজ, পতাকা, প্রতীকী ইভেন্ট আয়োজন করতেন।
- মোদি: বড় বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যোগ দিবস, রামমন্দির উদ্বোধন—সবই প্রতীকী ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার।
- অতিমাত্রায় দেশপ্রেমিক আবেগ উসকে দেওয়া
- হিটলার: জার্মান পতাকা, জাতীয় সংগীত, সৈনিকদের গৌরব সবসময় সামনে আনতেন।
- মোদি: ভারতীয় সেনা, “ভারত মাতা কি জয়”, জাতীয় পতাকার আবেগ নিয়মিত জাগিয়ে তোলেন।
- শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব খাটানো
- হিটলার: নাৎসি মতবাদ অনুযায়ী শিক্ষাক্রম তৈরি করেছিলেন।
- মোদি: NCERT বইয়ে ইতিহাস পরিবর্তনের অভিযোগ আছে (মুঘল ইতিহাস কমানো, হিন্দু সভ্যতা জোর দেওয়া)।
- অর্থনৈতিক বৈষম্য আড়াল করা
- হিটলার: ধনী শিল্পপতিদের সমর্থন নিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেন যুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের দিকে।
- মোদি: কর্পোরেট (অম্বানি-আদানী) ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ থাকলেও, সেটা ঢেকে দেন “দেশপ্রেম” ও “জাতীয় উন্নয়ন” স্লোগানে।
- বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্পকে জাতীয় গৌরবের প্রতীক করা
- হিটলার: মহাসড়ক (Autobahn), বিশাল স্থাপত্য (Albert Speer-এর নকশা) জাতীয়তাবাদের প্রতীক করেন।
- মোদি: Statue of Unity, রামমন্দির, সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রজেক্ট—এগুলো জাতীয় গর্ব হিসেবে তুলে ধরেন।
- সাংস্কৃতিক সমরূপতা চাপিয়ে দেওয়া
- হিটলার: জার্মান সঙ্গীত, ভাষা, সংস্কৃতি ছাড়া অন্য কিছু সহ্য করতেন না।
- মোদি: হিন্দি ভাষা ও হিন্দু সংস্কৃতিকে রাষ্ট্রীয় মানদণ্ডে চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে।
- যুব সম্প্রদায়কে হাতিয়ার করা
- হিটলার: Hitler Youth গড়ে তুলেছিলেন তরুণদের মগজধোলাই করতে।
- মোদি: RSS ও ABVP-এর মতো সংগঠন ছাত্র-যুবদের জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে।
- গণতান্ত্রিক কাঠামোর আড়ালে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা
- হিটলার: নির্বাচিত হয়ে পরে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছিলেন।
- মোদি: গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় থেকেও অনেক নীতি ও সিদ্ধান্ত “একনায়কসুলভ” বলে সমালোচিত।
- ধর্ম বা জাতিকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণের চেষ্টা
- হিটলার: আর্য জাতিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বলতেন।
- মোদি: হিন্দু সভ্যতাকে সেরা, প্রাচীন বৈজ্ঞানিক হিসেবে তুলে ধরেন।
- বহিরাগতকে ‘অশুদ্ধ’ বা ‘শত্রু’ হিসেবে দেখা
- হিটলার: ইহুদি, স্লাভ, জিপসিদের বলতেন “অশুদ্ধ জাতি।”
- মোদি: বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, মুসলিম অভিবাসীদের “অশুদ্ধ” বা শত্রু হিসেবে দেখা হয়।
- মহাকাব্যিক অতীত ব্যবহার
- হিটলার: আর্য মিথোলজি, প্রাচীন প্রতীক (Swastika) ব্যবহার করতেন।
- মোদি: রামায়ণ-মহাভারত, প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থ, ‘বিশ্বগুরু ভারত’ ধারণা বারবার ব্যবহার করেন।
- আত্মবিশ্বাসী কিন্তু আপসহীন মনোভাব
- হিটলার: “আমি যা বলি তাই শেষ কথা।”
- মোদি: বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার বদলে “একতরফা সিদ্ধান্ত” নেওয়ার অভিযোগ আছে (যেমন কৃষি আইন, নোটবন্দি)।
- বড়ো সংকটে সুযোগ নেওয়া
- হিটলার: জার্মানির যুদ্ধোত্তর সংকটকে কাজে লাগিয়েছিলেন ক্ষমতায় উঠতে।
- মোদি: গুজরাট দাঙ্গা, পরে জাতীয় সংকট (পাকিস্তান যুদ্ধ, পুলওয়ামা, করোনা) থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ করে।
- নেতা মানেই জাতির প্রতীক
- হিটলার: জার্মানি = হিটলার (Führer)।
- মোদি: ভারত = মোদি (Bharat Mata + Modi), সমর্থকদের চোখে দুটো প্রায় একাকার।
- সাধারণ মানুষের কষ্টকে ছোট করে দেখা
- হিটলার: যুদ্ধ ও নাৎসি নীতি চালাতে সাধারণ মানুষের জীবন বলি দেওয়া হয়েছে।
- মোদি: নোটবন্দি, লকডাউন, কৃষক আন্দোলনে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নীতিগুলো থেকে পিছিয়ে আসতে দেরি করেছেন।
- জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আবেগী রাজনীতি
- হিটলার: “জার্মানি বিপদে, আমাকে বাঁচাতে হবে।”
- মোদি: “ভারত বিপদে, আমাকে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিতে হবে।”
- নেতাকে ‘অভ্রান্ত’ প্রমাণ করা
- হিটলার: সমালোচনা মানতেন না, তাঁকে ভুল বলা নিষিদ্ধ ছিল।
- মোদি: সমালোচকদের “দেশবিরোধী” বলা হয়, আর সমর্থকরা বলেন “মোদি কখনো ভুল হতে পারেন না।”
- ভোটে বিশাল জয়ের পর “অপরাজেয়তা”র ভাব তৈরি
- হিটলার: ১৯৩৩ সালের পর প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যান।
- মোদি: ২০১৪ ও ২০১৯-এ বিপুল জয়ের পর “মোদি ম্যাজিক” বলা হয়।
- প্রচারকেন্দ্রিক নির্বাচন
- হিটলার: পুরো নাৎসি পার্টির চেয়ে হিটলারের নামেই প্রচার হতো।
- মোদি: বিজেপির চেয়ে বেশি “মোদির মুখ” নিয়েই ভোট হয়।
- ‘মহান সংস্কারক’ ইমেজ তৈরি
- হিটলার: বলতেন তিনি জার্মানিকে নতুন করে গড়ছেন।
- মোদি: বলেন তিনি “নতুন ভারত” তৈরি করছেন।
- শিক্ষিত মধ্যবিত্তকে প্রভাবিত করা
- হিটলার: মধ্যবিত্ত শ্রেণির হতাশা কাজে লাগিয়ে তাঁদের সমর্থন পান।
- মোদি: মধ্যবিত্ত হিন্দুদের জাতীয়তাবাদী আবেগ কাজে লাগান।
- সামরিক শক্তিকে ভোট রাজনীতিতে ব্যবহার
- হিটলার: সেনার জয়কে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় রূপ দেন।
- মোদি: সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বালাকোট হামলা প্রচারে ব্যবহার হয়।
- বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দুর্বল করা
- হিটলার: রাইখস্ট্যাগের সব বিরোধী দল ধ্বংস করেন।
- মোদি: বিরোধীদের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে সংসদে মাইক্রোফোন বন্ধ, মিডিয়ায় সীমিত উপস্থিতির অভিযোগ আছে।
- গোপন পুলিশ/সংস্থার ব্যবহার
- হিটলার: গেস্টাপো ব্যবহার করতেন সমালোচক দমনে।
- মোদি: কেন্দ্রীয় সংস্থা (ED, CBI, IT) বিরোধীদের বিরুদ্ধে বেশি ব্যবহারের অভিযোগ আছে।
- অভ্যন্তরীণ শত্রু বনাম বাহ্যিক শত্রু—দুটো একসাথে ব্যবহার
- হিটলার: অভ্যন্তরীণ (ইহুদি, কমিউনিস্ট) ও বাহ্যিক (ব্রিটেন, ফ্রান্স) শত্রু দেখিয়েছেন।
- মোদি: অভ্যন্তরীণ (মুসলিম, ‘দেশদ্রোহী’) ও বাহ্যিক (পাকিস্তান, চীন) শত্রু দেখান।
- বড় সমাবেশে ভক্তি-আবেগ জাগানো
- হিটলার: সমাবেশে জনগণকে একসাথে স্লোগান দিতে বাধ্য করতেন।
- মোদি: “ভারত মাতা কি জয়”, “বন্দে মাতরম” স্লোগান জনসভায় বারবার তোলা হয়।
- নিজেদের ইতিহাসের ‘নায়ক’ হিসেবে দাঁড় করানো
- হিটলার: বলতেন তিনি জার্মানির পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন।
- মোদি: সমর্থকরা বলেন – তিনি ভারতকে বিশ্বমঞ্চে নতুন মর্যাদা দিয়েছেন।
- অতীতের শাসকদের খলনায়ক বানানো
- হিটলার: ভেরসাই চুক্তি আর পুরনো নেতাদের বিশ্বাসঘাতক বানান।
- মোদি: মুঘল শাসক ও কংগ্রেসকে ভারতের দুরবস্থার মূল দায়ী দেখান।
- বড় উৎসব/জাতীয় ইভেন্টে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া
- হিটলার: উৎসব, কুচকাওয়াজ সবকিছুকে রাজনৈতিক করে তুলেছিলেন।
- মোদি: যোগ দিবস, দীপাবলি, রাম মন্দির—সব রাজনৈতিক ইস্যুতে রূপান্তরিত হয়।
- সংখ্যালঘুদের ধীরে ধীরে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করা
- হিটলার: প্রথমে সামাজিক বর্জন, পরে আইন করে বৈষম্য।
- মোদি: NRC, CAA, মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট কমানো—সবকিছুতে সংখ্যালঘুরা প্রান্তিক।
- সমাজে বিভাজন তৈরি করে শাসন মজবুত করা
- হিটলার: “আমরা বনাম তারা” নীতি।
- মোদি: “হিন্দু বনাম মুসলিম”, “দেশপ্রেমিক বনাম দেশদ্রোহী” নীতি।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো
- হিটলার: রেডিও, পত্রিকা ব্যবহার করতেন প্রচারণা আর মিথ্যে তথ্য ছড়াতে।
- মোদি: সোশ্যাল মিডিয়া টিম (IT Cell) ভুয়া তথ্য/প্রচারণা ছড়ানোর অভিযোগ আছে।
- আন্তর্জাতিক সমর্থন খুঁজতে কূটনৈতিক প্রদর্শনী
- হিটলার: মুসোলিনি, জাপানের সঙ্গে মিত্রতা গড়েন।
- মোদি: G20, BRICS, QUAD—আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় হয়ে শক্তি প্রদর্শন করেন।
- আবেগ দিয়ে যুক্তি ঢেকে দেওয়া
- হিটলার: বক্তৃতায় চিৎকার, চোখে আগুন—যাতে মানুষ যুক্তির বদলে আবেগে ভেসে যায়।
- মোদি: নাটকীয় বিরতি, আবেগী কান্না, নাটকীয় হাতের ভঙ্গি—এগুলো দিয়ে জনগণকে আবেগপ্রবণ করেন।
- নিজেদের ‘মেসিয়াহ’ বা ত্রাণকর্তা হিসেবে দাঁড় করানো
- হিটলার: বলতেন, তিনিই জার্মানিকে বাঁচাতে পারেন।
- মোদি: “আমি আছি, তাই ভারত আছে”—এই ভাবনা সমর্থকদের মধ্যে প্রচলিত।
- অতীতের মহিমা বনাম বর্তমানের সংকট তুলনা
- হিটলার: বলতেন, প্রাচীন জার্মানি গৌরবময় ছিল, এখন দুর্বল।
- মোদি: বলেন, প্রাচীন ভারত “বিশ্বগুরু” ছিল, এখন কংগ্রেসের কারণে পিছিয়ে আছে।
- প্রচারযন্ত্রে একতরফা আধিপত্য
- হিটলার: নাৎসি প্রচার ছিল সর্বত্র—বই, সিনেমা, রেডিও।
- মোদি: বিজ্ঞাপন, মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদির মুখ সর্বত্র।
- দেশপ্রেমকে নেতার প্রতি ভক্তির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া
- হিটলার: Führer-কে ভালোবাসা মানেই জার্মানিকে ভালোবাসা।
- মোদি: মোদিকে ভালোবাসা = ভারতকে ভালোবাসা (সমর্থকদের চোখে)।
- জনগণের দারিদ্র্যকে রাজনৈতিক অস্ত্র করা
- হিটলার: যুদ্ধ ও সংকটকে কাজে লাগিয়ে মানুষের ক্ষোভকে নিজের পক্ষে টানতেন।
- মোদি: “চা-বিক্রেতা” পরিচয় ব্যবহার করে গরিব মানুষের আবেগ কাজে লাগান।
- বড়ো জনসভা/শোতে নিজেকে কেন্দ্রে রাখা
- হিটলার: নাৎসি সমাবেশে সব আলোর কেন্দ্র ছিলেন তিনি।
- মোদি: জনসভা, আন্তর্জাতিক সফরে কেন্দ্রীয় চরিত্র শুধুই মোদি।
- দলীয় নেতাদের ছায়ায় রাখা
- হিটলার: নাৎসি পার্টির বাকিদের গুরুত্ব কম, সবকিছু হিটলারের নামে।
- মোদি: বিজেপি বা আরএসএস থেকেও বড় ইমেজ তাঁর নিজের।
- প্রতীক ও স্লোগানের অতিব্যবহার
- হিটলার: “Heil Hitler!”, Swastika প্রতীক সর্বত্র।
- মোদি: “আব কি বার মোদি সরকার”, “বিকাশ” – সর্বত্র মোদির নাম ও প্রতীক।
- প্রতিপক্ষকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া
- হিটলার: বিরোধীরা ছিল রাষ্ট্রশত্রু।
- মোদি: বিরোধীরা ‘দেশদ্রোহী’, ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’।
- সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি
- হিটলার: ইহুদিদের সঙ্গে মেলামেশা মানে বিপদ।
- মোদি: ভিন্নমত মানে এজেন্সির নোটিশ, মামলা, গ্রেপ্তার।
- শিক্ষাব্যবস্থায় নিজেদের মতবাদ ঢোকানো
- হিটলার: স্কুলে নাৎসি আদর্শ শেখানো হতো।
- মোদি: স্কুলে হিন্দু সভ্যতার “গৌরবময় ইতিহাস” শেখানোর প্রবণতা।
- বিদেশ ভ্রমণকে ক্ষমতার প্রচারণা হিসেবে ব্যবহার
- হিটলার: মুসোলিনির সঙ্গে দেখা, ইউরোপ সফর প্রচারণা হতো।
- মোদি: বিদেশ সফরে “মোদি-মোদি” ধ্বনি, NRIs মিটিং রাজনৈতিক প্রচারেই রূপ নেয়।
- শত্রুর বিরুদ্ধে জনমত উসকে দিয়ে সমর্থন আদায়
- হিটলার: ইহুদিদের দোষ দিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন।
- মোদি: পাকিস্তান ও মুসলিমদের ইস্যু করে জনগণকে একত্র করেন।
- বিরোধীদের হাস্যকর/তুচ্ছ করে দেখানো
- হিটলার: বিরোধীদের ব্যঙ্গচিত্রে উপহাস করতেন।
- মোদি: সংসদে বিরোধীদের নিয়ে ঠাট্টা করেন, “টুকরে টুকরে গ্যাং” বলে উপহাস করেন।
- ‘বড়ো মিথ্যা’ কৌশল (Big Lie Theory)
- হিটলার: বিশাল মিথ্যা বারবার বললে মানুষ বিশ্বাস করবে—এমনটা মানতেন।
- মোদি: বিরোধীরা বলেন—বারবার উন্নয়নের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করেন।
- অর্থনৈতিক ব্যর্থতাকে অন্য দিকে সরানো
- হিটলার: বেকারত্ব ঢাকতে যুদ্ধ।
- মোদি: বেকারত্ব ঢাকতে জাতীয়তাবাদী ইস্যু।
- বহির্বিশ্বে ক্ষমতার চিত্র আঁকা, অভ্যন্তরে ভয়
- হিটলার: বাইরে শক্তিশালী ইমেজ, ভেতরে ভয়ঙ্কর দমননীতি।
- মোদি: বাইরে বিশ্বনেতার ইমেজ, ভেতরে বিরোধীদের দমন।
- একই সঙ্গে ধর্মীয়-রাজনৈতিক ভূমিকা
- হিটলার: গির্জাকে কাজে লাগান, কিন্তু সবকিছু নাৎসি মতাদর্শে রূপ দেন।
- মোদি: মন্দির রাজনীতি, ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার।
- গণমাধ্যমকে শাসকের মুখপত্র বানানো
- হিটলার: স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রায় বন্ধ।
- মোদি: “গোদি মিডিয়া” বলে সমালোচিত।
- সংবিধানকে পাশ কাটানো প্রবণতা
- হিটলার: ওয়েইমার সংবিধানকে অকার্যকর করে একনায়কত্ব চাপান।
- মোদি: সমালোচকরা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত (ধারা ৩৭০ বাতিল, কৃষি আইন) যথেষ্ট আলোচনার বাইরে চাপিয়ে দেন।
- সংখ্যালঘুদের দেশপ্রেমে সন্দেহ তোলা
- হিটলার: ইহুদিদের জার্মানির শত্রু বলা হতো।
- মোদি: মুসলিমদের পাকিস্তানপন্থী বা “দেশদ্রোহী” আখ্যা দেওয়া হয়।
- নেতার প্রতীকী ছবি সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া
- হিটলার: Führer-এর ছবি স্কুল থেকে অফিসে সর্বত্র ঝুলত।
- মোদি: সরকারি বিজ্ঞাপন, টিকা সার্টিফিকেট, রাস্তার প্রকল্প—সবখানে মোদির ছবি।
- গণতন্ত্রের ভেতর থেকে গণতন্ত্র দুর্বল করা
- হিটলার: ভোটে এসে একনায়ক হন।
- মোদি: ভোটে এসে বিরোধীদের কণ্ঠ কমিয়ে দেন।
- প্রতিপক্ষকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দেওয়া
- হিটলার: পুরনো রাজনীতিবিদদের “দুর্নীতিগ্রস্ত” বলে গাল দেন।
- মোদি: বিরোধীদের “দুর্নীতিবাজ” বলে প্রচার করেন, কিন্তু নিজের ঘনিষ্ঠদের বিষয়ে নীরব।
- রাজনৈতিক সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া
- হিটলার: নাৎসি স্টর্মট্রুপার (SA) রাস্তায় ভয় দেখাতো।
- মোদি: গোরক্ষক, দাঙ্গা, মব লিঞ্চিং—এসবের সময় নীরবতা বা পরোক্ষ সমর্থন।
- ‘এক জাতি, এক নেতা, এক আইন’ নীতি
- হিটলার: এক জার্মানি, এক Führer, এক আইন।
- মোদি: এক দেশ, এক নির্বাচন, এক কর (GST), এক ভাষা নীতি প্রচার।
- বিরোধীদের গণআলোচনায় জায়গা না দেওয়া
- হিটলার: সংসদে বিরোধীরা কার্যত বাদ।
- মোদি: সংসদে বিরোধী দল প্রায়ই বাদ পড়ে, আলোচনা ছাড়াই আইন পাস হয়।
- জনগণকে ভয় দেখিয়ে সমর্থন আদায়
- হিটলার: বলতেন, “আমাকে ছাড়া দেশ ধ্বংস হবে।”
- মোদি: বলেন, “আমাকে ছাড়া দেশ ভেঙে যাবে, অরাজকতা আসবে।”
- দলকে নয়, ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে রাজনীতি
- হিটলার: নাৎসি পার্টি মানেই হিটলার।
- মোদি: বিজেপি মানেই মোদি—এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত।
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক কাজে লাগানো
- হিটলার: পুলিশ-সেনা সবই Führer-এর অধীনে।
- মোদি: পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ।
- নেতার সমালোচনা মানেই রাষ্ট্রের সমালোচনা
- হিটলার: Führer-এর সমালোচনা = রাষ্ট্রদ্রোহ।
- মোদি: মোদির সমালোচনা = ভারতবিরোধিতা বলে প্রচার হয়।
- ‘শক্তি প্রদর্শন’কে রাজনীতির কৌশল করা
- হিটলার: সামরিক কুচকাওয়াজ, অস্ত্র প্রদর্শন।
- মোদি: মেগা র্যালি, বিদেশ সফরে শক্তি প্রদর্শন।
- অতীতের কষ্টকে কাজে লাগানো
- হিটলার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অপমানকে ব্যবহার করে জনগণকে উত্তেজিত করেন।
- মোদি: মুসলিম শাসন ও কংগ্রেস আমলের “অবহেলা” তুলে ধরে হিন্দু ভোট ব্যাংককে উত্তেজিত করেন।
- শক্তিশালী প্রতীকী ভাষা ব্যবহার
- হিটলার: “রক্ত, মাটি, জাতি”—এই শব্দগুলো স্লোগান ছিল।
- মোদি: “মা ভারতী”, “চৌকিদার”, “বিশ্বগুরু ভারত”—এমন প্রতীকী শব্দ ব্যবহার করেন।
- বিরোধীদের দেশবিরোধী শক্তির এজেন্ট বলা
- হিটলার: বিরোধীরা নাকি ইহুদিদের এজেন্ট।
- মোদি: বিরোধীরা নাকি পাকিস্তান বা চীনের এজেন্ট।
- সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়া
- হিটলার: জার্মান সংস্কৃতি ছাড়া কিছুই টিকবে না।
- মোদি: হিন্দু সংস্কৃতিই ভারতের মূল পরিচয়—এই ধারণা চাপিয়ে দেন।
- জনগণকে বিভ্রান্ত করতে বড় মিথ্যা (Propaganda of Big Lies)
- হিটলার: “জার্মান জাতি অজেয়”—এমন বড় মিথ্যা চালাতেন।
- মোদি: “আচ্ছে দিন”, “প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি”—বিরোধীরা বলেন এগুলোও একই রকম বড় প্রতিশ্রুতি।
- যুবকদের ‘যোদ্ধা’ হিসেবে দাঁড় করানো
- হিটলার: Hitler Youth তরুণদের নাৎসি সৈনিক বানাতো।
- মোদি: ABVP, RSS শাখায় তরুণদের রাজনৈতিক-ধর্মীয় যোদ্ধা বানানো হয়।
- নেতার মৃত্যু/অপসারণ মানেই দেশের ক্ষতি—এই ধারণা ছড়ানো
- হিটলার: বলতেন, “আমি না থাকলে জার্মানি নেই।”
- মোদি: সমর্থকদের মধ্যে প্রচলিত—“মোদি ছাড়া ভারত পিছিয়ে যাবে।”
101. নেতৃত্বকে দেবতুল্য করে তোলা
- হিটলার: সমর্থকরা তাঁকে “Führer” (অতিমানব নেতা) মনে করত।
- মোদি: সমর্থকরা তাঁকে “বিশ্বগুরু” বা “ঈশ্বরপ্রদত্ত নেতা” বলে থাকেন।
102. জনগণের সমস্যাকে আবেগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া
- হিটলার: অর্থনৈতিক সংকটকে দেশপ্রেম দিয়ে আড়াল করতেন।
- মোদি: বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি—এসবকে “জাতীয় নিরাপত্তা” দিয়ে ঢেকে দেন।
103. সমাবেশে নাটকীয় উপস্থিতি
- হিটলার: রাতের মশাল মিছিল, সামরিক পোশাক পরে উপস্থিতি।
- মোদি: ঝলমলে আলো, থিম মিউজিক, সাজানো স্টেজে আগমন।
104. রাষ্ট্রকে নেতা = জাতির প্রতীক বানানো
- হিটলার: “আমি ছাড়া জার্মানি নেই।”
- মোদি: “মোদী মানেই ভারত, ভারত মানেই মোদী।” এমন প্রচারণা চলে।
105. শিল্প-সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার
- হিটলার: নাৎসি শিল্পী, সিনেমা, পোস্টার সব প্রোপাগান্ডা।
- মোদি: বলিউড, টিভি সিরিজ, বিজ্ঞাপন—সব হিন্দুত্ব ও মোদি প্রচারে ব্যবহার।
106. বিরোধী শাসকদের “দেশের শত্রু” বলা
- হিটলার: আগের নেতাদের দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিশ্বাসঘাতক বলতেন।
- মোদি: কংগ্রেস শাসনকে “৭০ বছর ধ্বংসের ইতিহাস” বলে আক্রমণ করেন।
107. জনগণকে বিভক্ত করে শাসন
- হিটলার: আর্য বনাম ইহুদি।
- মোদি: হিন্দু বনাম মুসলিম।
108. ইতিহাস পুনর্লিখন
- হিটলার: “আর্য জাতি শ্রেষ্ঠ”—এমন ইতিহাস বানানো।
- মোদি: হিন্দুত্বকেন্দ্রিক ইতিহাস পুনর্লিখনের চেষ্টা।
109. জনসাধারণের মনোযোগ সরাতে বহিঃশত্রু তৈরি
- হিটলার: সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইহুদি, কমিউনিস্ট।
- মোদি: পাকিস্তান, মুসলিম “আতঙ্কবাদী।”
110. সরকারের সমালোচনা = দেশবিরোধিতা
- হিটলার: “যারা বিরোধিতা করে, তারা জার্মানির শত্রু।”
- মোদি: “যারা মোদির সমালোচনা করে, তারা ভারতের শত্রু।”
111. রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তিপূজায় খরচ করা
- হিটলার: বিশাল সমাবেশ, সামরিক প্রদর্শনী, নেতার বিশাল ছবি।
- মোদি: বিশাল মূর্তি, স্টেডিয়াম, বিজ্ঞাপনে মোদির মুখ।
112. বিদেশ সফরে নিজের ভাবমূর্তি নির্মাণ
- হিটলার: বিদেশ সফরে শক্তিশালী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ছবি তুলতেন।
- মোদি: বিদেশ সফরে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং, নাম ধরে অভিবাদন, “Howdy Modi” অনুষ্ঠান।
113. রাষ্ট্রীয় সংকটকে নিজের জনপ্রিয়তায় ব্যবহার
- হিটলার: যুদ্ধকালীন সংকটে নিজের কর্তৃত্ব বাড়ালেন।
- মোদি: করোনা, সীমান্ত সংকট—এসবকে রাজনৈতিক প্রচারণায় রূপ দিলেন।
114. ধর্মীয় প্রতীককে রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার
- হিটলার: ক্রস, প্রাচীন আর্য প্রতীক।
- মোদি: গঙ্গা, মন্দির, হিন্দু প্রতীক।
115. সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার
- হিটলার: Wehrmacht = নাৎসি শক্তি।
- মোদি: সেনাবাহিনীর সাফল্য = মোদির কৃতিত্ব হিসেবে প্রচার।
116. অর্থনীতিকে “দেশপ্রেম” দিয়ে ঢেকে রাখা
- হিটলার: অর্থনৈতিক ভাঙন ঢাকলেন যুদ্ধপ্রস্তুতি দিয়ে।
- মোদি: বেকারত্ব ঢাকলেন “Make in India”, “Atmanirbhar Bharat” দিয়ে।
117. প্রচারের জন্য নতুন নতুন শ্লোগান
- হিটলার: “Ein Volk, ein Reich, ein Führer” (এক জাতি, এক সাম্রাজ্য, এক নেতা)।
- মোদি: “Sabka Saath, Sabka Vikas, Sabka Vishwas।”
118. আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে “দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র” বলা
- হিটলার: বিদেশি মিডিয়া সমালোচনা = জার্মান-বিরোধী।
- মোদি: বিদেশি সমালোচনা = ভারত-বিরোধী ষড়যন্ত্র।
119. তরুণদের মন জয় করার কৌশল
- হিটলার: Hitler Youth সংগঠন।
- মোদি: BJYM, RSS shakha, ডিজিটাল প্রচারক।
120. কর্পোরেট পুঁজিপতিদের সঙ্গে গোপন আঁতাত
- হিটলার: বড় জার্মান কোম্পানি = নাৎসি পার্টির অর্থদাতা।
- মোদি: বড় কর্পোরেট (Adani, Ambani) = বিজেপির অর্থদাতা।
121. সমালোচকদের চরিত্রহনন
- হিটলার: বিরোধীদের “অনৈতিক, বিকৃত, বিশ্বাসঘাতক” বলতেন।
- মোদি: সমালোচকদের “দেশদ্রোহী, টুকরো টুকরো গ্যাং, Urban Naxal” বলে আখ্যা দেন।
122. সেন্সরশিপ চাপানো
- হিটলার: মিডিয়া ও প্রকাশনা নাৎসি প্রোপাগান্ডার বাইরে যেতে পারত না।
- মোদি: ভারতীয় মিডিয়ার বড় অংশ সরকারপন্থী, সমালোচক সাংবাদিকরা জেলে যায় বা হুমকি পায়।
123. শিক্ষাব্যবস্থায় মতাদর্শ ঢুকিয়ে দেওয়া
- হিটলার: স্কুলে ইহুদি বিদ্বেষ আর আর্য শ্রেষ্ঠত্ব শেখানো হতো।
- মোদি: স্কুলে “সংস্কৃত”, “হিন্দুত্ব ইতিহাস” জোর করে ঢোকানো হয়।
124. বিরোধী নেতাদের আইনি জটিলতায় ফেলা
- হিটলার: রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মামলায় ফাঁসাতেন।
- মোদি: বিরোধী নেতাদের ED, CBI, IT মামলায় ফাঁসানো হয়।
125. সাধারণ মানুষকে গুপ্তচর বানানো
- হিটলার: নাগরিকদের উৎসাহ দিতেন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে খবর দিতে।
- মোদি: সোশ্যাল মিডিয়া “IT Cell” এর মাধ্যমে নজরদারি ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানো।
126. জাতিকে “অসাধারণ” বানানোর স্বপ্ন
- হিটলার: “Thousand Year Reich” মানে ১০০০ বছরের মহাসাম্রাজ্য।
- মোদি: “Viksit Bharat 2047”—বিশ্বগুরু ভারতের স্বপ্ন।
127. ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রচার
- হিটলার: আর্য শ্রেষ্ঠত্ব।
- মোদি: হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ব।
128. ছোট রাজ্য/অঞ্চল দমন করে কেন্দ্রীয় শক্তি বৃদ্ধি
- হিটলার: জার্মানির সব রাজ্যকে নাৎসি কেন্দ্রের অধীন করলেন।
- মোদি: কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রাজ্য ক্ষমতা টেনে নেওয়ার চেষ্টা।
129. বিশাল স্টেডিয়ামে বক্তৃতা দিয়ে জনমোহন তৈরি
- হিটলার: নুরেমবার্গ সমাবেশ।
- মোদি: “Howdy Modi”, “Namaste Trump”, বিশাল জনসভা।
130. সমালোচনাকে “গোপন শত্রুর ষড়যন্ত্র” বলা
- হিটলার: “কমিউনিস্টরা আমাদের ভেতর থেকে ধ্বংস করতে চাইছে।”
- মোদি: “Opposition, NGOs, বিদেশি এজেন্টরা ভারত ধ্বংসের চেষ্টা করছে।”
131. প্রশাসনকে দলীয়করণ
- হিটলার: পুলিশ, প্রশাসন, আদালত সব নাৎসি নিয়ন্ত্রণে।
- মোদি: প্রশাসন, তদন্ত সংস্থা, গভর্নর অফিস—সব বিজেপি প্রভাবাধীন।
132. ইতিহাসের প্রতীককে ব্যবহার করে আধুনিক শত্রু বানানো
- হিটলার: ইহুদিদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডের ইতিহাস টেনে আনা।
- মোদি: মুসলিম শাসনকালকে “আতঙ্ক” হিসেবে দেখানো।
133. রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ধর্মীয় তীর্থে যাওয়া
- হিটলার: খ্রিস্টান চার্চে যেতেন জনপ্রিয়তা বাড়াতে।
- মোদি: বারবার মন্দিরে যান রাজনৈতিক ফায়দার জন্য।
134. সংকটকালে “কেবল আমিই উদ্ধারকর্তা” প্রচার
- হিটলার: “জার্মানিকে আমি ছাড়া কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
- মোদি: “দেশকে সঠিক পথে আমি ছাড়া কেউ নিতে পারবে না।”
135. জনগণের ভয়কে রাজনৈতিক অস্ত্রে রূপান্তর
- হিটলার: ইহুদি আর কমিউনিস্ট ভয়ের প্রচার।
- মোদি: পাকিস্তান, মুসলিম, চীন ইত্যাদির ভয় প্রচার।
136. পুরনো রাষ্ট্রীয় প্রতীককে পুনরুজ্জীবিত করা
- হিটলার: স্বস্তিকা প্রতীককে নাৎসি প্রতীক করলেন।
- মোদি: “অশোক চক্র”, “গরু”, “সংস্কৃত” প্রতীক পুনরুজ্জীবিত।
137. ভিন্নমতকে দমন করে “এককথা” চাপানো
- হিটলার: কেবল নাৎসি মতই প্রচার হতো।
- মোদি: বিজেপি মতাদর্শ ছাড়া অন্য কণ্ঠরোধ করা হয়।
138. সাংস্কৃতিক উৎসবকে জাতীয়তাবাদী করা
- হিটলার: জার্মান ঐতিহ্য উৎসবকে নাৎসি উৎসবে রূপান্তর।
- মোদি: হিন্দু উৎসবকে রাজনৈতিক উৎসবে পরিণত করা।
139. আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে নিজের জনপ্রিয়তার শো বানানো
- হিটলার: বিদেশি চুক্তি/মিটিংকে জনগণের সামনে নাটকীয়ভাবে দেখাতেন।
- মোদি: বিদেশ সফরকে মিডিয়া প্রচারণার বিশাল ইভেন্ট বানান।
140. মিথ্যা প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি
- হিটলার: প্রতিটি বক্তৃতায় সমাধানহীন প্রতিশ্রুতি।
- মোদি: প্রতি নির্বাচনে “দ্বিগুণ আয়, ২ কোটি চাকরি” ইত্যাদি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি।
এখন পর্যন্ত আমরা ১৪০টি মিল সংগ্রহ করলাম। হিটলার ও মোদির মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, দুজনের শাসনব্যবস্থায় এক ধরনের ভয়ঙ্কর মিল রয়েছে। জনগণকে বিভক্ত করা, ভিন্নমতকে দমন করা, ইতিহাসকে বিকৃত করা, প্রোপাগান্ডা ছড়ানো, এবং শত্রু সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকা—এসব একই কৌশল তারা ব্যবহার করেছেন। হিটলার জার্মানিকে যুদ্ধ ও ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিলেন, আর মোদি ভারতের গণতন্ত্র, সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। ইতিহাস শেখায়, এ ধরনের একনায়কতন্ত্র শেষ পর্যন্ত দেশ ও জনগণের জন্য ক্ষতিকর। তাই মানুষের উচিত সচেতন থাকা, সত্যকে রক্ষা করা, এবং মানবতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানো।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url